ছোটগল্প: অতিমানবের গিণিপিগ

প্রচন্ড মাথা ঝিমঝিম করছে। চোখ খুলে তাকাতে পারছে না। গলার হাড়ের নিচে অসহ্য ব্যথা। পানির পিপাসা পেয়েছে খুব। অল্প অল্প করে চোখ খুলে তাকাল মনির। চোখের ঝাপসা ভাবটা আস্তে আস্তে সরে এসেছে। সে এখন স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে, সে একটা নীল চেয়ারে হেলান দিয়ে বসা। সে এখানে কিভাবে এল, কিছুই মনে করতে পারছে না। তার চারপাশটা একটু ভালভাবে দেখার চেষ্টা করল। পরিবেশটা তার কাছে অনেকটা অপার্থিব মনে হচ্ছে।

অনেকগুলো লোক একটা লম্বা কিঁউয়ে দাড়িয়ে। সবারই অঙ্গে কোন না কোন অদ্ভুত ক্ষতের চিহ্ন। কারো হাত ভাঙ্গা, কারো বুকের পাজরেঁর কাছে দগদগে রক্তাক্ত ছিদ্র। চারপাশের এই অস্বাভাবিকতায় মনিরের ধাতস্ত হতে বেশ খানিকটা সময় লাগল। লাইনের মাথায় একটি পরীর মত অপরূপ সুন্দরী মেয়ে সবাইকে কি যেন জিজ্ঞেস করছে এবং একটি বিশেষ ঘরের ভেতর যাবার জন্য নির্দেশ করছে। মনির সচেষ্টভাবে এই অদ্ভুত পরিবেশে খাপ খাইয়ে নেয়ার চেষ্টা করল।

এই ঘরের কোন আসবাবপত্রই জাগতিক মনে হচ্ছে না মনিরের কাছে। রুমটিতে কোন জানালা বা বাতি নেই। তা সত্ত্বেও ঘরে ভরা জোৎস্নার মত মায়াবী আলোর আভা ছড়িয়ে আছে চারপাশে।

গলার ব্যথাটা এখনও খুব পীড়া দিচ্ছে। পানির পিপাসা এখন আরো বেড়েছে। বলার মত কাউকে দেখতেও পাচ্ছে না যাকে পানির কথা বলা যায়। হঠাৎ একজন বিকৃত লোককে ঘরে ঢুকতে দেখে মনির রীতিমত আর্তনাদ করে উঠল। ম্লান আলোতেও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে লোকটির পেট ও পিঠ থেতলানো। দেখে মনে হচ্ছে, একটা বড় ট্রাক পেটের উপর দিয়ে চলে গিয়েছে। এমন মূমুর্ষূ অবস্হায় এরকমভাবে চলার কথা না লোকটার। লোকটি বেশ স্বাভাবিক ভঙ্গিতে লাইনের শেষে গিয়ে দাঁড়িয়ে চারদিকটা ফ্যাল ফ্যাল করে দেখতে লাগল।

-“আপনি মনির?”
অয়ন দেখল অস্বাভাবিক চেহারার একটি লোক তার পেছনে দাঁড়িয়ে।
-“হ্যাঁ, আমিই মনির।“

মনির কথা বলে বুঝতে পারল তার কথা বলতে খুব কষ্ট হচ্ছে। অয়ন রোবটের মত বলে উঠল, “একটু পানি দেওয়া যাবে আমাকে।”

-“আপনি পাশের ঘরটিতে গিয়ে বসুন, কিছুক্ষের মধ্যেই পানির পিপাসা কমে যাবে।“

মনিরের এর পেছনে কোন সায়েন্টিফিক ব্যাখ্যা নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে ইচ্ছা করল না। সে খুব দ্রুত পাশের খালি ঘরটিতে গেয়ে বসল। আর সত্যিই পানির পিপাসাটা কর্পুরের মত উড়ে গেল!

কিছুক্ষন আগে অয়ন এই অস্বাভাবিক পরিবেশের পেছনে কিছু যুতসই যুক্তি খুজেঁ নিয়ে নিজেকে সহজ করবার চেষ্টা করছিল। কিন্তু এখন আর সেই যুক্তিগুলো কোন কাজেই দিচ্ছে না।

-“পানির পিপাসা মিটেছে?”
-“হ্যাঁ, ধন্যবাদ। আচ্ছা বলা যাবে, আমি এখন কোথায়? কিভাবে এলাম এখানে?”
-“হ্যাঁ, বলা যাবে। পৃথিবী নামক একটি ছোট্ট গ্রহ থেকে কয়েকজন মানুষকে আমাদের বিশেষ চতুর্থ মাত্রার স্প্যাসক্রাফট সংগ্রহ করে নিয়ে এসেছে। আপনি তাদেরই একজন! স্প্যাসক্রাফটি আসার সময় এন্ড্রোমিন্ডার সাথে আঘাত লাগায় স্যম্পলগুলো কিছুটা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। আমাদের সায়েন্স সেন্টার ল্যাবরেটরি টিম আমাদের হাতে মানবপ্রজাতির উপর কিছু গবেষনালব্ধ উপাত্ত চেযেছে! এই গ্রহে ওরগানিক মলিকুলের ঘাটতি ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। মানুষের দেহমৌল থেকে সেই ঘাটতি পুরণ করার আপ্রাণ চেষ্টা চলছে। এক্ষেত্রে আপনাদের অংশগ্রহনের জন্য এই গ্রহবাসী কৃতজ্ঞ। 


মনির ফ্যাঁল ফ্যাঁল করে তাকিয়ে থাকল অনেকক্ষন লোকটির দিকে। এখনও বুঝে উঠতে পারছে না কিছুই। গলা শুকিয়ে আসছে। তীব্র পানির পিপাসা আবারও পেয়ে বসেছে, মনিরের।

Leave a Reply